Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৬ মার্চ ২০২৩

এক নজরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা

                 বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা জাতীয় পর্যায়ে চিত্ত বিনোদনের একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র হতে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে মিরপুরে এক মোনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ১৮৬.৬৩ একর জায়গা জুড়ে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা অবস্থিত। ১৯৪৭ সালে ঢাকায় সরকারী পর্যায়ে একটি চিড়িয়াখানা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। পঞ্চাশের দশকে ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে সীমিত পরিসরে চিত্রা হরিণ, হাতি, বানরসহ কয়েকটি প্রজাতির বন্যপ্রাণী নিয়ে চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয়। মিরপুর এলাকায় ১৯৬০ সালে চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠাকল্পে একটি মহাপরিকল্পনা অনুমোদিত হয়। ১৯৬৪ সালে চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা এবং সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করা হয়। প্রাণীদের বাসস্থান ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরী, হাইকোর্ট সংলগ্ন চিড়িয়াখানা হতে বন্যপ্রাণী স্থানান্তর এবং দেশ বিদেশের প্রাণী সংগ্রহ করে ১৯৭৪ সালের ২৩ শে জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে এটি সৌন্দর্যমন্ডিত চিড়িয়াখানায় পরিনত হয়। যেখানে বন্যপ্রাণীসমূহকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনায় লালন-পালন ও প্রদর্শন করা হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ১৩৭ টি খাঁচায় ২৩৭ প্রকোষ্ঠের মধ্যে রক্ষিত ১৩৫ প্রজাতির ৩৩৪২ টি প্রাণী ও এ্যাকুরিয়াম ফিস প্রদর্শিত হচ্ছে| উদ্দেশ্য জনসাধারণের বিনোদন, দূর্লভ ও বিলুপ্ত প্রায় বন্য প্রাণী সংগ্রহ ও প্রজনন, প্রাণী বৈচিত্র সংরক্ষণ, শিক্ষা, গবেষনা এবং এ বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি চিড়িয়াখানা স্থাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

১. বিনোদন: মানুষের চেনা ও জানার আগ্রহ একটি স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। বিশেষ করে শিশুদের বন্য প্রাণীকে স্ব-চক্ষে দেখা ও তাদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ শিশু চরিত্রের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এছাড়া সকল বয়সের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে বন্য প্রাণীদের প্রতি আকর্ষণ ও তাদেরকে স্ব-চক্ষে দেখা ও জানার আগ্রহ একটি অতি চিত্তাকর্ষণ বিনোদন। চিড়িয়াখানা বন্যপ্রাণীদরে সংগ্রহ করে প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করে।

২.দূর্লভ ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী সংগ্রহ ও প্রজনন: যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার কারণে জীব-বৈচিত্র হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষের বাসস্থান নির্মাণ, শিল্প কারখানা স্থাপন ও বিভিন্ন কারণে কাঠ সংগ্রহ বৃদ্ধির ফলে দিন দিন বনজঙ্গল উজাড় হচ্ছে। ফল স্বরূপ বন্যপ্রাণীর আহার ও বাসস্থান সংকুচিত হচ্ছে। অনেক বন্যপ্রাণী ইতোমধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও হুমকিতে থাকা ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করে চিড়িয়াখানায় সংরক্ষণের মাধ্যমে তাদের প্রজনন করানো হয় এবং প্রাণীটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা হয়।

৩. প্রাণী বৈচিত্র সংরক্ষণ: বন্য প্রাণীদের আবাসস্থল দিন দিন সংকুচিত হওয়ার কারণে তাদের প্রাকৃতিক স্বাভাব-চরিত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চিড়িয়াখানায় প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরীর মাধ্যমে এ প্রাণী বৈচিত্র সংরক্ষণ করা হয়।

৪. শিক্ষা: চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণীদের পরিচিতি যেমন-বিস্তৃতি, আকার-আকৃতি, স্বভাব-চরিত্র, বাসস্থান ব্যবস্থাপনা, প্রকৃতিতে অবস্থান, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, প্রজনন, জীবনকাল প্রভৃতি বর্ণনার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী ও দর্শণার্থীদের প্রাণীদের সর্ম্পকে প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান করা হয়।

৫.গবেষণা: চিড়িয়াখানায় সংরক্ষিত বন্য প্রাণীদের নিয়ে প্রাণী বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজ সম্পাদিত হয়।

৬.গণসচেতনতা বৃদ্ধি: বন্য প্রাণীদরে প্রতি সদয় আচরণ ও তাদের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি মানুষের একটি সামাজিক আচরণ হওয়া উচিত। চিড়িয়াখানা বন্য প্রাণীদের প্রতি জীব কল্যানের এ শিক্ষাটি দিয়ে থাকে।

 

চিড়িয়াখানায় যা করণীয়:

 ময়লা, আবর্জনা, পলিথিন ও খাদ্যের উচ্ছিষ্ট অংশ নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলুন।

 চিড়িয়াখানার প্রাণীদের প্রতি সদয় হোন।

 চিড়িয়াখানার নিয়ম-নীতি মেনে চলুন, সূর্যাস্তের পূর্বেই চিড়িয়াখানা ত্যাগ করুন।

 কর্মরত কর্মচারীদের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করুন।

 নিজে ও বাচ্চাদেরকে প্রাণী থেকে নিরাপদ দুরত্বে রাখুন, নিজেদের বাচ্চা হারানো থেকে সতর্ক হোন।

 পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত“ময়ূরী ও ঈগল” রেঁস্তোরা সমূহ হতে সুলভ মূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।  

 

চিড়িয়াখানায় যা বর্জনীয়:

 চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে ধুমপান নিষেধ।

 সূর্যাস্তের পরে চিড়িয়াখানায় অবস্থান আইনতঃ দন্ডনীয়।

 প্রাণীদেরকে ঢিল ছোঁড়া ও খোঁচা দিয়ে বিরক্ত করা সম্পূর্ণ নিষেধ; প্রাণীদের উত্যক্ত করবেননা ও খাবার দিবেন না।

 নির্দিষ্ট টয়লেট ব্যতিত যেখানে সেখানে প্রস্রাব করা নিষেধ।

 কোন অপরিচিত ব্যক্তি বা হকারদের নিকট হতে খাবার গ্রহণ করবেন না।

 নির্জন, সংরক্ষিত এলাকা ও নিরাপত্তা বেষ্টনির ভিতরে প্রবেশ করবেন না ।

 অসামাজিক আচরণ হতে বিরত থাকুন।

 চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে পোষাপ্রাণী, আগ্নেয়াস্ত্র, অগ্নি-উদ্দীপক দ্রব্য, লাঠি-সোটা ইত্যাদি বহন করা দন্ডনীয় অপরাধ।